Story about Animals for Kids: The Clever Monkey and the Angry Lion

 Story about Animals for Kids

Story about Animals for Kids


ধাপ – ১: জঙ্গলের পরিচয় ও চরিত্র পরিচয়

একটা সবুজে ভরা সুন্দর জঙ্গল। গাছের ডালে ডালে পাখির গান, ঝোপে ঝোপে খরগোশের খেলা, নদীর তীরে হরিণের দৌড়ঝাঁপ—সব মিলিয়ে যেন এক কার্টুনের দুনিয়া। এই জঙ্গলে বাস করত নানা ধরনের পশুপাখি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল সিংহ, যাকে সবাই জঙ্গলের রাজা বলে মানত। সিংহের গর্জনে সব পশুপাখি কাঁপত, তবে অন্তরে সে খুব গর্বিত আর একটু রাগীও ছিল।

জঙ্গলের আরেক দিক থেকে প্রতিদিন ভেসে আসত বানরের দুষ্টু হাসি। সে সব সময় ডালে ডালে লাফাতো, ঝুলত আর অন্য প্রাণীদের বিরক্ত করত। তবে তার মিষ্টি হাসি আর চালাক বুদ্ধি তাকে আলাদা করে তুলেছিল।

এছাড়া ছিল হাতি—সে ছিল শান্ত, ধীর আর জ্ঞানী। যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি মেটানোর দায়িত্ব নিত সে-ই। হরিণ ছিল দ্রুতগামী, যে মুহূর্তে বনের একদিক থেকে অন্যদিকে ছুটে যেতে পারত। আর রঙিন পাখিরা আকাশ ভরে গান গাইত।

এই পশুপাখিরাই মিলে গড়ে তুলেছিল জঙ্গলের এক মজার সমাজ। কিন্তু সমস্যা বাঁধল একদিন বানরের বুদ্ধি আর সিংহের রাগের কারণে। আর সেটাই হলো আজকের আমাদের গল্প। 

ফ্যান আবিষ্কারের আশ্চর্যজনক ইতিহাস পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ধাপ – ২: বানরের দুষ্টুমি শুরু

প্রতিদিন ভোর হলে বানরের চোখ খুলত দুষ্টুমির নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। একদিন সে দেখল খরগোশ ঘাস খাচ্ছে। বানর চুপিচুপি পেছন থেকে গিয়ে তার লম্বা কান টেনে দিল। খরগোশ চমকে লাফিয়ে উঠল। অন্যদিকে সে হরিণের মাথায় ঝপ করে একটা পাকা কলা ছুঁড়ে মারল। হরিণও ভয়ে লাফ দিল আর বনের ভেতর দৌড়ে পালাল।

সবচেয়ে বেশি দুষ্টুমি সে করত পাখিদের সাথে। ডালে ডালে বসে থাকা টিয়া পাখিদের গলা নকল করত, কখনো কাও কাও করে কাকের আওয়াজ তুলত, আবার কখনো টুইট টুইট করে ছোট পাখিদের ডাকে ভয় দেখাত। ফলে আসল পাখিরা বিভ্রান্ত হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকত।

বনের সবাই মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও তার এসব কাণ্ডে হাসত। কারণ বানরের মুখভঙ্গি আর কৌতুক এত মজার ছিল যে রাগ করার উপায়ই থাকত না। কিন্তু এভাবে প্রতিদিনের মতো সে যেদিন সিংহের দুপুরের ঘুম নষ্ট করল, তখনই ঘটল আসল বিপত্তি। 

ধাপ – ৩: সিংহের দুপুরের ঘুম নষ্ট

গরম দুপুর। সূর্য উঁচুতে, চারপাশে নীরবতা। সিংহ বড় গাছের ছায়ায় আরামে ঘুমাচ্ছিল। তার ঘুমের শব্দে মনে হচ্ছিল মাটি কাঁপছে। তখনই বানরের মাথায় এলো নতুন দুষ্টুমির বুদ্ধি।

সে চুপিচুপি গাছের ওপর থেকে বড় একটা পাকা আম ছিঁড়ে আনল। চোখ ঘুরিয়ে নিশ্চিত হলো—সবাই তাকিয়ে আছে। এরপর সে ধীরে ধীরে সিংহের মাথার ঠিক ওপরের ডালে বসল। আর “হি হি” করে হেসে আমটা ছেড়ে দিল।

ধপ করে আম সিংহের কপালে পড়তেই সে চমকে জেগে উঠল। চোখ লাল করে চারদিকে তাকিয়ে গর্জন দিল,
—কে আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করার দুঃসাহস করেছে?

তার গর্জনে হরিণ লাফিয়ে দূরে পালাল, পাখিরা উড়ে গেল আকাশে, খরগোশ গর্তে ঢুকে গেল। শুধু বানর গাছের ডালে বসে মুখ চেপে হাসতে লাগল।

সিংহ উপরে তাকিয়ে বানরকে দেখে দাঁত ঘষতে লাগল। তার চোখে আগুন জ্বলতে লাগল। এবার আর মজা নেই—এবার বানরের জন্য বড় শাস্তি ঠিক করেছে সিংহ।

গেল আকাশে, খরগোশ গর্তে ঢুকে গেল। শুধু বানর গাছের ডালে বসে মুখ চেপে হাসতে লাগল।

সিংহ উপরে তাকিয়ে বানরকে দেখে দাঁত ঘষতে লাগল। তার চোখে আগুন জ্বলতে লাগল। এবার আর মজা নেই—এবার বানরের জন্য বড় শাস্তি ঠিক করেছে সিংহ।

ধাপ – ৪: সিংহের রাগ আর পশুদের ভয়

সিংহ দাঁড়িয়ে উঠল আর গর্জন করতে লাগল। বনের মাটিতে যেন ভূমিকম্প শুরু হলো। অন্য সব পশুপাখি ভয়ে কাঁপতে লাগল। সবাই বুঝল—এবার নিশ্চয়ই বানরের দুষ্টুমির শেষ হবে।

বানর গাছের ডালে লাফাতে লাফাতে দূরে সরে গেল, কিন্তু সিংহের রাগ থামল না। সে চেঁচিয়ে বলল,
আজ আমি এই বানরকে ধরে শাস্তি দেব। নইলে জঙ্গলের শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে।

হাতি এগিয়ে এসে সিংহকে শান্ত করার চেষ্টা করল।

রাজা, রাগে কিছু হয় না। একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।

কিন্তু সিংহ চেঁচিয়ে বলল,
না! আজ এই বানরকে শিক্ষা দিতেই হবে।

পশুপাখিরা একসাথে জড়ো হলো। তারা সবাই ভয়ে

কাঁপছে, আবার চাইছে কোনো ঝগড়া না হোক। বানরও ভয় পেলেও মুখে হাসি ধরে রেখেছে। সে জানে—শক্তিতে সিংহকে হারানো সম্ভব নয়, কিন্তু বুদ্ধিতে জেতা সম্ভব।

এমন সময় হাতি একটা প্রস্তাব দিল—যা এই ঝগড়াকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল।

ধাপ – ৫: হাতির উপদেশ ও প্রতিযোগিতার ঘোষণা

হাতি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
হে রাজা, আমি একটা উপায় বলি। রাগে কিছু সমাধান হবে না। আমরা একটা প্রতিযোগিতা করি। যার শক্তি আর বুদ্ধি বেশি, সে-ই হবে বিজয়ী। এভাবে ঝগড়া না করে মজা করেই সমাধান হবে।

সবাই হাতির কথা শুনে মাথা নাড়ল। সিংহ একটু ভেবে রাজি হলো। সে গর্জন করে বলল,
ঠিক আছে। আমি প্রমাণ করব, আমি-ই জঙ্গলের রাজা। আর ওই বানরকে হারাব।

বানর উল্টো হাততালি দিয়ে হেসে বলল,
ওহ রাজা, আমি তো মজা পেয়ে গেলাম। প্রতিযোগিতা মানে খেলা। খেলায় হারজিত থাকেই। দেখা যাক কে জেতে!

অন্য পশুপাখিরা আনন্দে লাফাতে লাগল। সবাই চাইল খেলাটা মজার হোক।

অবশেষে হাতি নিয়ম ঘোষণা করল—
তোমাদের দুজনকে নদীর ওপার থেকে খাবার এনে ফিরতে হবে। যে আগে আসবে, সে-ই হবে বিজয়ী।

ধাপ – ৬: প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি

প্রতিযোগিতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো জঙ্গলে উত্তেজনা। হরিণরা মাঠে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, পাখিরা গাছ থেকে গাছে খবর ছড়াচ্ছে—আজ এক বড় খেলা হবে!

সিংহ প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হলো। সে বুক ফুলিয়ে বলল,
আমার শক্তি দিয়ে আমি নদী লাফিয়ে পার হব।

বানর লেজ নেড়ে হাসল। তার মনে হলো, সিংহ যতই শক্তিশালী হোক, নদীর স্রোত তার জন্য সমস্যা হবে। আর বানর জানত—ডাল থেকে ডালে দোল খেলে সে খুব সহজেই নদী পার হতে পারবে।

পশুপাখিরা সবাই প্রতিযোগিতার মাঠে জড়ো হলো। হাতি বিচারকের আসনে দাঁড়াল। সে বলল,
তিন গুনে দৌড় শুরু হবে। এক… দুই… তিন!

এবার সিংহ গর্জন দিয়ে দৌড় শুরু করল, আর বানর লাফাতে লাফাতে গাছে উঠল।

ধাপ – ৭: সিংহের চেষ্টা নদী পার হওয়া

সিংহ দ্রুত নদীর ধারে পৌঁছাল। তার শক্তি দেখে সবাই ওহ্ বলে চিৎকার করল। সে এক লাফে নদীতে ঝাঁপ দিল। কিন্তু নদীর স্রোত ভীষণ জোরে। সিংহকে অনেক কষ্ট করে সাঁতার কাটতে হলো। তার শরীর ভারী, তাই জল কেটে এগোনো সহজ হলো না।

স্রোত তাকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছিল। এক সময় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল, তবু হাল ছাড়ল না। সে হুঙ্কার দিয়ে জোরে জোরে সাঁতার কাটতে লাগল। অনেক কষ্টে অবশেষে নদীর ওপারে উঠতে পারল।

অন্যদিকে পশুপাখিরা তার সাহস দেখে হাততালি দিল। কিন্তু সিংহের শরীর ভিজে একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেল। এখনও তাকে খাবার নিয়ে ফিরতে হবে—তখন বুঝল, শুধু শক্তি দিয়ে সব কিছু হয় না।

ধাপ – ৮: বানরের বুদ্ধি আর সহজ সাফল্য

বানর নদীর ধারে না গিয়ে গাছের ডাল ধরে এক ডাল থেকে আরেক ডালে দোল খেতে খেতে এগোতে লাগল। তার লাফালাফি দেখে পাখিরা হেসে উঠল। বানর আনন্দে গান গাইতে গাইতে পার হলো।

একসময় সে নদীর ওপরের বড় গাছের ডাল ধরে সোজা ওপারে পৌঁছে গেল। এক ফোঁটা জলও তার গায়ে লাগল না। তারপর কলার গোছা নিয়ে আবার গাছে গাছে ঝুলতে ঝুলতে ফিরে এল।

অন্য পশুপাখিরা হেসে হাততালি দিল। তারা বুঝল—বানরের বুদ্ধি শক্তির চেয়েও দ্রুত কাজ করেছে। বানর হাসি মুখে সবার সামনে এসে কলার গোছা উঁচিয়ে ধরল।

সিংহ তখনও ক্লান্ত শরীর নিয়ে নদী পার হচ্ছিল। সবাই দেখল, বানর আগেই কাজ শেষ করে বিজয়ী হলো।

ধাপ – ৯: ফলাফল ও সবার প্রতিক্রিয়া

হাতি ঘোষণা করল,
এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী হলো বানর। কারণ সে শুধু সময়মতো ফিরে এসেছে তা-ই নয়, নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে সহজ পথে সমাধান করেছে।”

সব পশুপাখি হাততালি দিয়ে বানরকে অভিনন্দন জানাল। পাখিরা গান গাইল, খরগোশ নাচল, হরিণ লাফ দিল। জঙ্গলে উৎসব শুরু হলো।

সিংহ কিছুটা লজ্জা পেল, তবে সে রাগ করল না। বরং মাথা নিচু করে বলল,
আজ আমি বুঝলাম, শুধু শক্তি দিয়ে সব কিছু হয় না। বুদ্ধিও সমান জরুরি।

বানর হেসে তার দিকে হাত বাড়াল।
রাজা, রাগ করলে সবাই ভয় পায়। কিন্তু হাসলে সবাই খুশি হয়। আমরা একসাথে থাকলেই জঙ্গল সুন্দর থাকবে।

গাধা যখন অধ্যাপক এই ফানি গল্পটি পড়তে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ধাপ – ১০: নীতিকথা ও মজার সমাপ্তি

এরপর থেকে সিংহ কম রাগ করতে শিখল। সে আর বানরের ওপর রাগ করত না। বরং বানরের দুষ্টুমি দেখে হেসে উঠত। বানরও প্রতিদিন সবার মুখে হাসি ফোটানোর কাজ করত, তবে আর কারও ক্ষতি করত না।

জঙ্গলের পশুপাখিরা বুঝল—শক্তি আর বুদ্ধি একসাথে থাকলে জীবন সহজ হয়। শুধু শক্তি থাকলে ঝামেলা বাড়ে, আর শুধু বুদ্ধি থাকলে মজা হয় কিন্তু সম্মান পাওয়া যায় না। দুটো মিলেই পূর্ণতা আসে।

শেষে সবাই মিলেমিশে গাইল

আমরা সবাই বন্ধু,

শক্তি আর বুদ্ধি মিলিয়ে

জঙ্গল হবে সুন্দর,
হাসি-খুশিতে ভরা!

এইভাবে জঙ্গল আবার শান্তিতে ভরে উঠল। পশুপাখিরা একসাথে খেলল, গান গাইল আর হাসল। গল্প শেষ হলো, তবে বাচ্চারা শেখার মতো একটা বড় শিক্ষা পেল।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
whatsapp" viewbox="0 0 512 512" stroke="none" fill="currentColor">